আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে সাহায্য চাওয়া ১ম অধ্যায়

আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো কাছে সাহায্য চাওয়াঃ

 
আল্লাহর ওলীগণ ও আম্বিয়ায়ে কেরাম থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা বৈধ,যদি এ আকীদা পোষণ করা হয় যে, মূলতঃ সাহায্যের উৎস মহান প্রতিপালকই।ওলী ও নবীগণ হচ্ছেন সেই সাহায্যের বিকাশস্থল।মুসলমান এ আকীদাই পোষণ করেন।কোন মূর্খও কোন ওলীকে খোদা মনে করে না।খোদা ভিন্ন অন্য কারো কাছে সাহায্য প্রার্থনার স্বীকৃতি সূচক অনেক প্রমাণ পাওয়া যায় কোরআনী আয়াতসমুহে,বিশুদ্ধ হাদিস সমূহে,ফিকাহ শাস্ত্রবিদ ও হাদিসবেত্তাগণের উক্তিসমূহে,এমনকি স্বয়ং ভিন্নমতাবলম্বীদের উক্তি সমূহেও।এখন এসবের পৃথক পৃথকভাবে বর্ণনা করার প্রয়াস পাচ্ছি।

কোরআন কারীমে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেনঃِ وَادعوا شُهَداءَكُم مِن دونِ اللَّهِ إِن كُنتُم صٰدِقينَ  অর্থাৎঃ আল্লাহ্‌      ব্যতীত      নিজেদের      সকল  সহায়তাকারীকে  আহবান  করো  (সাহায্যের  জন্য), যদি তোমরা সত্যবাদী হও! (সূরা বাকারা, আয়াতঃ২৩,পারাঃ১) এ আয়াতে কাফিরদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে- কোরআনর অনুরুপ একটি সূরা গঠন করে দেখাও,তোমাদের এ কাজে সহায়তাদানের জন্য তোমাদের সাহায্যকারীদেরকে ডেকে নাও।দেখুন,খোদা ভিন্ন অন্য কিছু বা অন্য কারো কাছ থেকো সাহায্য চাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে, এ আয়াতে।কোরআনের অন্যত্র এরশাদ হচ্ছেঃقالَ مَن أَنصارى إِلَى اللَّهِ قالَ الحَوارِيّونَ نَحنُ أَنصارُ اللَّهِ ءامَنّا بِاللَّهِ وَاشهَد بِأَنّا مُسلِمونَ  অর্থাৎঃ   ‘কারা   আমার  (ঈসা আঃ)   সাহায্যকারী আল্লাহ্‌র প্রতি?’ সাহায্যকারীরা (হাওয়ারী) বললো, ‘আমরা       খোদার       দ্বীনের       সাহায্যকারী। (সূরা আলে ইমরান,আয়াতঃ৫২) এ আয়াতে বলা হয়েছে যে,ঈসা আঃ তাঁর অনুসারীদেরকে সম্বোধন করে বলেছেন,আমার সাহায্যকারী কে কে আছ? সুতারাং,বোঝা যায় যে,তিনি খোদা ভিন্ন অন্যদের সাহায্য প্রার্থী হয়েছেন।কোরআনের আর এক জায়গায় ইরশাদ হচ্ছেঃوَتَعاوَنوا عَلَى البِرِّ وَالتَّقوىٰ وَلا تَعاوَنوا عَلَى الإِثمِ وَالعُدوٰنِ  অর্থাৎঃ  সৎ  ও খোদাভীরুতার   কাজে  তোমরা   পরস্পরকে  সাহায্য করো আর পাপ ও সীমালংঘণ একে অন্যের সাহায্য করো না (সূরা মায়েদা,আয়াতঃ০২) এখানে দেখুন,বান্দাগণকে একে অপরের সাহায্য করার আদেশ দেয়া হয়েছে।অন্যত্র আরো এরশাদ হয়েছেঃيٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنوا إِن تَنصُرُوا اللَّهَ يَنصُركُم অর্থাৎঃ হে      ঈমানদারগণ!    যদি    তোমরা     আল্লাহ্‌র দ্বীনের     সাহায্য     করো,     তবে     আল্লাহ্‌     তোমাদের  সাহায্য   করবেন। (সূরা মুহাম্মদ,আয়াতঃ০৭) এখানেও স্বয়ং মহা প্রতিপালক,যিনি কারো মুখাপেক্ষী নন,নিজ বান্দাদের নিকট সাহায্য চেয়েছেন।আরও লক্ষ্য করুন,মহান প্রভু প্রতিশ্রুতি গ্রহণের দিন(ইয়াউমে মীছাক) নবীগণের রুহ থেকে হুযুর ﷺ এর ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন, আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেনঃلَتُؤمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنصُرُنَّه অর্থাৎঃ তোমরা    নিশ্চয়      নিশ্চয়    তাঁর    উপর    ঈমান আনবে  এবং  নিশ্চয়  নিশ্চয়  তাঁকে   সাহায্য   করবে।(সূরা আলে ইমরান,আয়াতঃ৮১) এ থেকে জানা গেল যে,সেই অঙ্গিকার গ্রহণের দিন থেকে আল্লাহর বান্দাদেরকে সাহায্য করার নির্দেশ জারী করা হয়েছে।অন্যত্র বলা হয়েছেঃيٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنُوا استَعينوا بِالصَّبرِ وَالصَّلوٰةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصّٰبِرينَ অর্থাৎঃ
হে ঈমানদারগণ! সবর ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য   চাও।  নিশ্চয়     আল্লাহ্‌  সবরকারীদের  সাথে রয়েছেন। (সূরা বাকারা,আয়াতঃ১৫৩) এ আয়াতে মুসলমানদের নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনার উপদেশ দেয়া হয়েছে।নামাজ ও ধৈর্য খোদা ভিন্ন অন্য কিছুই তো।কোরআনের আর এক জায়গায় আছেঃٌ فَأَعينونى بِقُوَّةٍ অর্থাৎঃ সুতরাং    আমাকে  সাহায্য    শক্তি     দ্বারা    করো।(সূরা কাহাফ,আয়াতঃ৯৫) এ থেকে জানা গেল যে,হযরত যুলকারনাইন লৌহ প্রাচীর নির্মাণ করার সময় জনগণ থেকে সাহায্য চেয়েছিলেন।মহান রব এরশাদ করেছেনঃ  أَيَّدَكَ بِنَصرِهِ وَبِالمُؤمِنينَ অর্থাৎঃ  যিনি     আপনাকে     শক্তি     প্রদান  করেছেন স্বীয় সাহায্য এবং মু’মিনদের দ্বারা।(সূরা আনফাল, আয়াতঃ৬২) আরও এরশাদ করেছেনঃ يٰأَيُّهَا النَّبِىُّ حَسبُكَ اللَّهُ وَمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ المُؤمِنينَ অর্থাৎঃ হে    অদৃশ্যের    সংবাদদাতা    (নবী)!    আল্লাহ্‌  আপনার     জন্য     যথেষ্ট     এবং      এ       যতো     সংখ্যক মুসলমান আপনার অনুসারী হয়েছে।(সূরা আনফাল,আয়াতঃ৬৪)অন্যত্র এরশাদ করেছেনঃ فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ مَولىٰهُ وَجِبريلُ وَصٰلِحُ المُؤمِنينَ وَالمَلٰئِكَةُ بَعدَ ذٰلِكَ ظَهيرٌ অর্থাৎঃ তবে         নিশ্চয়        আল্লাহ্‌         তাঁর সাহায্যকারী       এবং    জিবরাঈল     ও    সৎকর্মপরায়ণ মু’মিনগণ!  এবং  এরপর ফিরিশ্‌তাগণ  সাহায্যকারী রয়েছে। (সূরা তাহরীম, আয়াতঃ০৪) আর এক জায়গায় এরশাদ করা হয়েছেঃ إِنَّما وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسولُهُ وَالَّذينَ ءامَنُوا الَّذينَ يُقيمونَ الصَّلوٰةَ وَيُؤتونَ الزَّكوٰةَ وَهُم رٰكِعونَ অর্থাৎঃ নিশ্চয় তোমাদের বন্ধু তো, আল্লাহ্‌ এবং তার রসূল   ও  ঈমানদারগণ,   যারা  নামায  কায়েম  করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ্‌রই সামনে বিনত হয়। (সূরা মায়েদা,আয়াতঃ৫৫)।অন্য এক জায়গায় এরশাদ করা হয়েছেঃ وَالمُؤمِنونَ وَالمُؤمِنٰتُ بَعضُهُم أَولِياءُ بَعضٍ অর্থাৎঃ   এবং  মুসলমান  নর      ও  মুসলমান  নারীগণ একে  অপরের  বন্ধু(সাহায্যকারী) (সূরা তওবা,আয়াতঃ৭১) আর এক জায়গায় এরশাদ করা হয়েছেঃ نَحنُ أَولِياؤُكُم فِى الحَيوٰةِ الدُّنيا وَفِى الءاخِرَةِ অর্থাৎঃ আমরা(আল্লাহ/ফেরেশতা)   তোমাদের  বন্ধু (সাহায্যকারী)   পার্থিব   জীবনে  ও আখিরাতে  । (সূরা হা-মীম সেজদা, আয়াতঃ৩১) অতএব,জানা যায় যে,মহান প্রতিপালক আমাদের সাহায্যকারী।আবার মুসলমানগণও পরস্পর পরসরপরের সাহায্যকারী।তবে মহান প্রতিপালক হচ্ছেন সত্ত্বাগতভাবে সাহায্যকারী,আর অন্যরা হচ্ছেন পরোক্ষভাবে সহায়তাকারী।

        হযরত মূসা (আঃ) ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে যখন ফিরআউনের কাছে যাবার জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন, তখন তিনি আরয করলেনঃوَاجعَل لى وَزيرًا مِن أَهل,هٰرونَ أَخِى,اشدُد بِهِ أَزرى অর্থাৎঃ এবং    আমার   জন্য   আমার    পরিবারবর্গের মধ্য থেকে একজন উযীর করে দাও!, সে কে? আমার ভাই হারূন; তাঁর দ্বারা আমার কোমর শক্ত করো! (সূরা ত্বহা,আয়াতঃ২৯-৩১) প্রতিপালক আল্লাহ তখন একথা বলেননি,তুমি আমাকে বাদ দিয়ে অন্যের আশ্রয়ের মুখাপেক্ষী হচ্ছ,আমি কি যথেষ্ট নই? বরং তাঁর প্রার্থনা মন্জ্ঞুর করেছেন।বোঝা গেল যে,বান্দাগণ যে সাহায্যপ্রার্থী হন,তা নবীগণের সুন্নাত।

     মিশকাত শরীফে হযরত রবীআ ইবনে কা'ব আসলামী(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে মুসলিম শরীফের রেওয়ায়েতের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণিত আছেঃ হুজুরﷺ আমাকে (রবীআ) বলেনঃ "আমার কাছে কিছু চাও।আমি বললাম,বেহেশতে আপনার সঙ্গে থাকার জন্য প্রার্থনা জানাচ্ছি।এছাড়া আরও কিছু তোমার কাছে কি?" বললাম,"না,কেবল এটিই।"এরশাদ করলেন আত্মসত্ত্বার ঘাড়ে বেশী করে নফল ইবাদাতের বোঝা চাপিয়ে আমাকে সহায়তা দান কর"
★মুসলিম শরীফঃ কিতাবুস সালাত,১/৩৫৩ হাদিসঃ ৪৮৯
★★মিশকাত শরীফঃ১/১৮৪ হাদিসঃ ৮৯৬
★★★নাসাঈঃ সুনানে কোবরা,২/২২৭,হাদিসঃ ১১৩৮
★★★★মুসলিমঃ ১/২৫৩,হাদিসঃ ২২৬

এতে প্রমাণিত হল যে,হযরত রবীআ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হুজুরﷺ এর কাছে বেহেশত লাভের প্রার্থনা করেছেন।হুজুর ﷺ একথা বলেন নি,যে 'তুমি খোদার কাছে প্রার্থী না হয়ে আমার কাছে বেহেশত তলব করেছ;তাই তুমি মুশরিক গণ্য হয়েছ।'বরঞ্চ বলেছেন,'তোমর প্রার্থনা মন্জ্ঞুর করা হল,আরও কিছু চাওয়ার থাকলে চেয়ে নাও।' এক্ষেত্রে দেখুন,খোদা ভিন্ন অন্যের থেকে সাহায্য চাওয়া হয়েছে।আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে যে,হুজুর ﷺ রবীআ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কে বলেছেন,হে রবীআ, তুমি এ ব্যাপারে আমাকে এতটুকু সাহায্য কর তথা বেশী করে নফল ইবাদত কর।তিনিও খোদা ভিন্ন অপরের কাছে সাহায্য চেয়েছেন।এ হাদিসের প্রেক্ষাপটে "আশিআতুল লুমআত" গ্রন্থে বলা হয়েছেঃ "প্রার্থিত বস্তুকে বিশেষিত না করে ইরশাদ করা হয়েছে 'চেয়ে নাও'।কোন বিশেষ বস্তু তলব করার কথা বলেন নি।এতে বোঝা যায়,সব কিছুই তাঁর হাতে।তিনি যা' চান এবং যাকে দিতে চান স্বীয় প্রতিপালকের সম্মতিক্রমে দিয়ে দেন।কেননা দুনিয়া ও আখিরাত তাঁর বদন্যতার ফল; আর লওহ ও কলমের জ্ঞানরাশি তাঁর জ্ঞান ভান্ডারের কিয়দাংশ মাত্র।দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণকামী হলে তাঁর মহান দরকারে আসুন,যা ইচ্ছে চেয়ে নিন।"
★আশিয়াতুল লুমআত কৃতঃ শায়খ আবদুল হক মোহাদ্দেস দেহলভীঃ ১/৩৯৬ পৃঃ
শাইখ আবদুল হক(রহঃ) এর উক্তি এ বিষয়টির ফায়সালা করে দিল যে,দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয়  সন্তান-সন্ততি,ধন-দৌলত,বেহেশত,নরকাগ্নি থেকে মুক্তি,এমনকি আল্লাহকেও হুজুর ﷺ এর কাছ থেকে চাইতে পারবেন।জনৈক সুফি কবি কি চমৎকার কথাই না বললেনঃ
ইয়া রাসুলাল্লাহ,আপনার কাছে চাচ্ছি খোদাকে।ইয়া আল্লাহ,তোমার কাছে কামনা করছি রাসূলকে পাবার।

তাফসীরে কাবীরে সুরা আনআমের আয়াতঃ وَلَو أَشرَكوا لَحَبِطَ عَنهُم ما كانوا يَعمَلونَ  এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছেঃ "এর ৩য় প্রকারের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন নবীগণ,তাঁরা হচ্ছেন সে সব সম্মানিত মহাপুরুষ, যাঁদেরকে মহাপ্রতিপালক আল্লাহ এতটুকু প্রজ্ঞা ও খোদা পরিচিতির জ্ঞান দান করেছেন যে,এর ফলশ্রুতিতে তাঁরা সৃষ্টিকূলের অভ্যন্তরীণ অবস্থা ও তাদের রুহ সমুহকে সক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।তাঁদেরকে এমন কুদরত ও ক্ষমতায় ভুষিত করেছেন যে,এর ফলে সৃষ্টিকুলের বাহ্যিক অবস্থাও তাদের নিয়ন্ত্রাণাধীন।"
★ইমাম ফখরুদ্দীন রাজীঃ তাফসীরে কবীরঃ ১৩/৫৫ পৃঃ
সেই একই তাফসীরে  আয়াত وَإِذ قالَ رَبُّكَ لِلمَلٰئِكَة এর তাফসীর প্রসঙ্গে লিখা আছে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছে,কেউ কোন বনে-জঙ্গলে বিপদে পড়লে যেন বলেঃ হে আল্লাহর বান্দাগণ,আমাকে সাহায্য করুন,আল্লাহ আপনাদেরকে দয়া করবেন।

তাফসীরে রুহুল বয়ানে ৬ পারার সূরা মায়েদার আয়াতوَيَسعَونَ فِى الأَرضِ فَساد এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখা আছে-"শাইখ সালাউদ্দিন(রহঃ) বলেছেন,আমাকে প্রতিপালক আল্লাহ এমন ক্ষমতা দিয়েছেন যে,আসমানকে যমীনের উপর ফেলে দিতে পারি;সেই খোদা প্রদত্ত ক্ষমতা বলে ইচ্ছে করলে সারা দুনিয়াবাসীকে ধ্বংস করে দিতে পারি।কিন্তুু আমি তা না করে তাদের সংশোধন ও বিশুদ্ধির জন্য দোআ করি।"
★তাফসীরে রহুল বয়ান কৃতঃ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কীঃ ২/৪৬৫ পৃঃ
 'আশিআতুল লুমআত' গ্রন্থে' যিয়ারাতুল কুবুর' শীর্ষক অধ্যায়ের প্রারম্ভে আছেঃ "ইমাম গজ্জালী (রহঃ) বলেছেন,যাঁর কাছ থেকে জীবদ্দশায় সাহায্য চাওয়া যায়,তাঁর মৃত্যুর পরেও তাঁর নিকট সাহায্য চাওয়া যাবে।জনৈক বুযুর্গ ব্যক্তি বলেছেন,আমি চারজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে দেখেছি,যারা তাঁদের কবরে সে একই কাজ বা তার চেয়েও বেশী কাজ করেছেন,যা তারা তাঁদের জীবদ্দশায় করতেন।আমাদের এক সম্প্রদায় বলেছেন,জীবিতদের সাহায্য অধিকতর সক্রিয়;আর আমি বলি, মৃতের সাহায্য অধিকতর কার্যকরী।ওলীগণের নিয়ন্ত্রণ সব জগতেই বিদ্যমান।এ ক্ষমতা হচ্ছে তাঁদের রুহসমুহের,রুহসমুহ অবিনশ্বর ও স্থায়ী।"
★আশিআতুল লুমআত কৃতঃ শায়খ আবদুল হক মোহাদ্দেস দেহলভীঃ ১/৭১৫পৃঃ

মিশকাত শরীফের 'যিয়ারাতুল কুবুর' শীর্ষক অধ্যায়ের হাশিয়াতে লিখা আছেঃ" নবী(আঃ) কিংবা অপরাপর আম্বিয়া কেরাম ছাড়া অন্যান্য কবরবাসীদের কাছ থেকে দুআ চাওয়ার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে।অনেক ফিকহা শাস্ত্রবিদ এর স্বীকৃতি দেননি,কিন্তুু সুফি মাশায়েখ এবং কতিপয় ফিকাহ বিশারদ এ বিষয়টি স্বপ্রমাণ করেছেন।ইমাম শাফেঈ(রহঃ) বলেছেন- হযরত মূসা কাযেম(রহঃ) এর কবর দুআ কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে বিষনাশক ঔষধ তুল্য,যা বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে প্রমাণিত।ইমাম গজ্জালী(রহঃ) বলেছেন,যার কাছে জীবদ্দশায় সাহায্য চাওয়া যায়,তাঁর থেকে ওফাতের পরেও সাহায্য প্রার্থনা করা যেতে পারে।"
★হাশিয়ায়ে মিশকাতঃ১৫৪পৃঃ
★★ইমাম গজ্জালী, ইহইয়াউল উলুমুদ্দীনঃ২/২৪৭পৃঃ।
এই এবারত থেকে জানা গেল যে,নবী করীমﷺ বা অন্যান্য আম্বিয়া কেরাম থেকে সাহায্য চাওয়ার ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই;তবে আল্লাহর ওলীগণের কবরসমূহ থেকে সাহায্য কামনার ব্যাপারে মতভেদ আছে।স্থুলদৃষ্টি সম্পন্ন উলামা এর স্বীকৃতি দেন নি;সুফীয়ায়ে কেরাম ও দিব্যজ্ঞানের অধিকারী ফিকহবিদগণ তা জায়েজ বলেছেন।

'হিসনে হাসীন' নামক কিতাবের ২০২ পৃষ্টায় বর্ণিত আছেঃ"কেউ সাহায্যের প্রত্যাশী হলে তার বলা উচিৎ "হে আল্লাহর বান্দাগণ, আমাকে সাহায্য করুন,হে আল্লাহর বান্দাগণ, আমাকে সাহায্য করুন।"
★ইমাম জাজরী দামেস্কীঃ হিসনে হাসীন, ২২পৃঃ।
উক্ত কিতাবের ব্যাখ্যা গ্রন্থ "আল হিরযুছ ছমীন"-এর ব্যাখ্যাকর আল্লামা মোল্লা আলী কারী(রহঃ) উক্ত বক্তব্যের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আরও বলেছেনঃ "যদি অরণ্যে কারো পশু পালিয়ে যায়,তার এ বলে 'আহবান করা উচিৎ-'হে আল্লাহর বান্দাগণ,একে থামিয়ে দিন"।
★মোল্লা আলী ক্বারীঃআল হিরযুছ ছমীন,২০২ পৃঃ
আল্লাহর বান্দাগণ বলতে কি বুঝানো হয়েছে হয়, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেছেনঃ "আল্লাহর বান্দাগণ,বলতে এখানে ফেরেশতা,বা মুসলমান জ্বীন কিংবা আবদাল নামে অভিহিত ' রিজালুল গায়েবকে' বুঝানো হয়েছে"।
★মোল্লা আলী ক্বারী, আল হিরযুছ ছমীন,২০২ পৃঃ
এরপর আরো বলেছেন" এ হাদিসটি 'হাদিসে হাসান' এর পর্যায়ভুক্ত।মুসাফিরদের জন্য এ হাদিসটি বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।এ হাদিসের সত্যতা পরীক্ষিত"।
★মোল্লা আলী ক্বারীঃ আল- হিরযুছ ছমীন,২০২ পৃঃ
আল্লামা শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী(রহঃ) তাফসীরে 'ফতেহুল আযীযের' ২০ পৃঃ বলেছেনঃ" একথা উপলব্ধি করা দরকার যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছ থেকে তাঁর উপর এমনভাবে ভরসা করে সাহায্য ভিক্ষা করা হারাম যেখানে সে ব্যক্তিকে খোদায়ী সাহায্যের প্রতিভুরুপে মনে করা হয় না।আর যদি আল্লাহর দিকেই মনোনিবেশ করা হয় এবং সে ব্যক্তিকে আল্লাহর সাহায্যের বিকাশস্থল মনে করে আল্লাহর হিকমত ও কার্যকারণ সম্পর্কের ভিত্তিতে তার নিকট বাহ্যিকরুপে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়,তাহলে তা খোদা পরিচিতিমূলক জ্ঞান থেকে দূরে নয় এবং শরীয়তের দৃষ্টিতেও বৈধ।অপরের কাছ থেকে এ ধরনের সাহায্য ওলী ও নবীগণও চেয়েছেন।মূলতঃ এতে খোদা ভিন্ন অন্য কারো কাছ থেকেই সাহায্য প্রার্থনা করা হয়।"


তাফসীরে আযীযীতে সূরা বাকারার তাফসীরে ৪৬০ পৃষ্ঠায় শাহ আবদুল আযীয বলেনঃ
افعال عادى الهي رامثل بخشيدن فرزند وتوسبع رزق وشفاء مريض وامثال ذلك رامشر ان نسبت به ارواح خبيثه وامنام مى نمايند وكافر مى شوند از تاثير الهى ياخواصى مخلوقات اومي دانند از ادويه ومقافير يادعائے صلحاء بند گان اوكه همه از جناب اودر خواسته انجاح مطلب مى كنا نند مى فهمند در ايمان ايشاں خلل نمى افتد -

অর্থাৎ- আল্লাহর সচরাচর কার্যাবলী যেমন- সন্তান, দান, র“জি-রোজগার বৃদ্ধিকরণ, রোগীকে রোগ-মুক্তিদান ও এ ধরনের অন্যান্য কার্যাবলীকে মুশরিকগণ দুষ্ট ও পাপী আত্মা ও প্রতিমাদের সহিত সম্পর্কযুক্ত করে থাকে, যা’র ফলে তারা কাফির বলে গণ্য হয়। আর মুসলমানগণ এসব বিষয়কে খোদার হুকুম বা তাঁর সৃষ্ট জীবের বিশেষত্বের ফলশ্র“তি বলে মনে করেন। যেমন- ওষুধ, গাছ-গাছড়া, লতা-পাতা ইত্যাদির দ্রব্যগুণ কিংবা তাঁর নেক বান্দাগণের দু’আ। আল্লাহর এ নেক বান্দাগণ মহান প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করে জনগণের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন। এতে ওসব মুসলিমের ঈমানের কোন ক্ষতি হয় না।

★  শায়খ আবদুল আজীজ মুহাদ্দিস দেহলভী ঃ তাফসীরে ফতহুল আযীয : ১/৪৬০ পৃ.

‘বুস্তানুল মুহাদ্দিছীন’ নামক গ্রন্থে শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিস সাহেব (রহ:) শায়খ আবুল আব্বাস আহমদ যররূক (রহ:) এর কবিতার এ স্তবকটি উদ্ধৃত করেছেন :

اَنَا لِمُرِيْدِ يْ جَامِعٌُ لِشَتَاتِهِ – اِذَا مَامَطَى جَوْرُ الزَّمَانِ بِنِكْبِةِ

وَاِنْ كُنْتَ فِيْ ضَيْقٍ وَّكَرْبٍ وَّوَحْشَةٍ – فَنَادِبِيَازَرُّوْقُ آَتِ بِسُرْعَةِ

অর্থাৎ শাইখ আহমদ যররূক (রহ:) বলেছেন, আমার মুরীদ যখন যুগসন্ধিক্ষণে বা যুগের আবর্তন-বিবর্তনের ফলে বিবিধ-বিপদাপদ ও দুর্যোগের শিকার হয়, আমি তাঁর অস্থির চিত্ততা, ব্যাকুলতা, আশা নিরাশার মধ্যে তাঁর দোদুল্যমানতা ইত্যাদি দূরীভূত করি। তাঁর মুরীদগণের প্রতি লক্ষ করে তিনি আরো বলেছেন, তুমি যদি আর্থিক দৈন্য-দশার শিকার হও, কোন দুর্যোগে পতিত হও বা কোন ভয় ভীতির সম্মুখীন হও, তখনই ‘ইয়া যররূপ’ বলে আমাকে ডাকিও, আমি তৎক্ষণাৎ তোমার সাহায্যার্থে উপস্থিত হয়ে যাব।

★শায়খ আবদুল আজীজ মুহাদ্দিস দেহলভী : বুস্তানুল মুহাদ্দিছীন: ৮২ পৃঃ

তাফসীরে কবীরে, তাফসীরে রূহুল বয়ানে এবং তাফসীরে খাযেনে’ সুরা ইউসূফের এক আয়াতসূরা: ইউসূফ, আয়াত : ৪২, পারা: ১২

প্রসঙ্গে লিখেন-

وَاعْلَمْ أَنَّ الِاسْتِعَانَةَ بِالنَّاسِ فِي دَفْعِ الظُّلْمِ جَائِزَةٌ فِي الشَّرِيعَةِ

-‘‘জেনে রাখ জুলুম নির্যাতন প্রতিরোধ করার জন্য মানুষের সাহায্য প্রার্থী হওয়া শরিয়তে বৈধ।’’

★আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী: তাফসীরে র“হুল বায়ান: ৪/৩৪০পৃ.

★ফখরুদ্দীন রাজী, তাফসীরে কাবীর, ১৮/৪৬১পৃ. জুহাইলী, তাফসরিুল মুনীর, ১২/২৭১পৃ.

তাফসীরে ‘খাযেনে’ আয়াত فَاَنْسَاهُ الشَّيْطَنُ এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে :

اَلْاِسْتِعَانَةُ بِالْمَخلُوْقِ فِىْ دَفْعِ الضَّرَرِ جَائِزَةٌ

-‘‘বিপদাপদ দূরীকরণার্থে সৃষ্টজীবের সাহায্য প্রার্থনা বৈধ। (তাফসীরে খাযেন, ২/৫৩০পৃ.) সুপ্রসিদ্ধ ‘দুরর“ল মুখতার’ গ্রন্থের ৩য় খন্ডে ‘বাবুল লুকাত’ শীর্ষক অধ্যায়ের শেষে হারানো জিনিস অনুসন্ধানের একটি পন্থার কথা উলে­খিত হয়েছে :

اِنَّ الْاِنْسَانَ اِذَاضَاعَ لَهُ شَيْءٍ وَّاَرَادَ اَنْ يَّرُدُّهُ اللهُ عَلَيْهِ فَلْيَقِفْ عَلَى مَكَانِ عَالٍ مُسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةِ وَيَقْرَءُ الْفَاتِحَةَ وَيُهْدَىْ ثَوَابَهَا لِلنَّبِيِّ عَلَيْهِ السَّلاَمُ ثُمَّ يُهْدِيْ ثَوَابَهَا لِسَّيِّدِىْ اَحْمَدَ اِبْنَ عَلْوَانٍ يَقُوْلُ يَاسَيِّدِىْ يَااَحمَدُ اِبْنِ عَلْوَانَ اِنْ لَّمْ تَرُدَّعَلَيَّ ضَالَّتِىْ وَاِلاَّنَزَعْتُكَ مِنْ دِيْوَانِ الْاَوْلِيَاءِ فَاِنَّ اللهَ يَرُدُّ ضَالَتَهُ بِبَرْكَتِهِ.

-‘‘কারো কোন জিনিস হারানো গেলে সে যদি এ প্রত্যাশা করে যে, খোদা তা’আলা তার হারানো বস্তুটি ফিরিয়ে দিক, তাহলে তার উচিত কোন উঁচু জায়গায় গিয়ে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো। তথায় সুরা ফাতিহা পাঠ করে তার ছওয়াব নবী করীম (ﷺ কে ও পরে আমার মাননীয় শাইখ আহমদ ইবন আলওয়ান (রহ:) কে হাদিয়া স্বরূপ দান করে এ দু’আটি পাঠ করতে হবে :

يَاسَيِّدِىْ يَا اَحْمَدُ اِبْنِ عَلْوَانَ اِنْ لَّمْ تَرُدَّ عَلَىَّ ضَالَّتِىْ وَاِلاَّنَزَعَتُكَ مِنْ دِيْوَانِ الْاَوْلِيَاءِ.

‘হে আমার মওলা, হে আহমদ বিন আলওয়ান, আপনি যদি আমার হারানো বস্তুটি ফিরিয়ে না দেন, তাহলে ওলীগণের দপ্তর থেকে আপনার নাম বাদ দিয়ে দেব।’ এরূপ বললে খোদা তা’আলা তাঁর (উক্ত ওলী) বরকতে হারানো বস্তুটি ফিরিয়ে দিবেন।’’

★ আলাউদ্দিন হাস্কাফি : দুরর“ল মুখতার : ৩/৩২৪ পৃ.

দেখুন, এ দু’আর মধ্যে সৈয়দ আহমদ ইবন আলওয়ান (রহ:) কে আহবান করা হয়েছে, তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করে হয়েছে, তাঁর থেকে হারানো জিনিসটি তলব করা হয়েছে। আর এ দু’আটির কথা কে বলেছেন? এ দু ’আটি শিখাচ্ছেন হানাফীদের শ্রেষ্ঠ ফিকাহ বিশারদ সুবিখ্যাত দুরর“ল মুখতার’ গ্রন্থের রচয়িতা।

হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহ:) ‘কসীদায়ে নু’মান’ এ হুযুর (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) কে লক্ষ্য করে বিনীত প্রার্থনা জানিয়েছেন :

يَااَكْرَمَ الثَّقَلَيْنِ يَاكَنْزَ الْوَريَ

جُدْلِىْ بِجُوْدِكَ وَاَرْضِنِىْ بِرَضَاكَ

اَنَا طَامِعٌُ بِالْجُوْدِ مِنْكَ لَمْ يَكُنْ

لِاَبِيْ حَنِيْفَةَ فِي الْاَنَامِ سَوَاكَ

অর্থাৎ- ‘ওহে জ্বীন ও মানবজাতির সর্বাধিক সম্মানিত ও দয়াবান, সত্ত্বা, ওহে খোদার নেয়ামত সমূহের ভান্ডার, আল্লাহর আপনাকে যে নিয়ামতের বিশাল ভান্ডার দান করেছেন, সেখান থেকে দয়া করে আমাকেও কিছু দিন। আল্লাহ তা’আলা আপনাকে সন্তুষ্ট করেছেন। আপনি আমাকে সন্তুষ্ট কর“ন। আপনার দান ও কর“ণার প্রত্যাশী হয়েছি। এ আবু হানীফার জন্য সৃষ্টি জগতে আপনি ছাড়া আর কেউ নেই।

★ ইমাম আবু হানিফা : কাসীদায়ে নুমান : পৃ.২২

 এখানে দেখুন, স্পষ্টত: হুযুর (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) এর সাহায্যের জন্য বিনীত আবেদন করা হয়েছে। ‘কসীদায়ে বুরদা’য় আছে :

يَااَكْرَمَ الْخَلْقِ مَالِي مَن اَلُوْذُبِهِ

سِوَاكَ عِنْدَ حَلُوْلِ الْحَادِثِ الْعَمَمِ

অর্থাৎ- হে সৃষ্টিকূরের সর্বোত্তম সত্ত্বা! আপনি ছাড়া আমার এমন কেউ নেই, যাঁর শরণাপন্ন হতে পারি সর্বাব্যাপী বিপদাপদ অবতীর্ণ হবার সময়।

★ ক. শরফুদ্দীন বুহুরী ঃ কাসীদায়ে বুরদা ঃ ১৫-১৬ পৃ.

খ. ইমাম খরপুতী ঃ শরহে কাসীদায়ে বোরদা ঃ ২১৭ পৃ.

খ্যাতনামা উলামা, ফিকাহ বিশারদ ও মাশাইখের উক্তি সমূহ, যেখানে তাঁরা হুযুর (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) এর কাছ থেকে সাহায্য ভিক্ষা করেছেন, সবগুলো একত্রিত করতে একটি দপ্তরের প্রয়োজন। সুতরাং, এতটুকুই যথেষ্ট বিধায় এখানেই শেষ করছি।

এছাড়া ‘কবরসমূহ যিয়ারতের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ’ শীর্ষক আলোচনায় (২/২৮২পৃঃ)‘ফত্ওয়ায়ে শামীর ইবারত উদ্ধৃত কবর, যেখানে ইমাম শাফেঈ (রহ:) বলেছেন, “যখন আমি কোন সমস্যার সম্মুখীন হতাম, তখনই ইমাম আবু হানীফা (রহ:) এর মাযারে চলে যেতাম; তাঁর বরকতেই আমার উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে যেত।”

★খতিব বাগদাদীঃ তারিখে বাগদাদঃ১/১২৩ পৃঃ

‘নুযহাতুল খাতিরিল ফাতির ফি তরজুমাতে সাইয়েদীন শরীফ আবদিল কাদির’ নামক গ্রন্থের ৬১ পৃষ্ঠায় গ্রন্থকার মোল­া আলী কারী (রহ:) হুযুর গাউছে আযম (রা:) এর একটি বাণী উদ্ধৃত করেছেন :

مَنِ اسْتَغَاثَ بِىْ فِىْ كُرْبَةٍ كُشِفَتْ عَنْهُ وَمَنْ نَادَانِىْ بِاِسْمِىْ فِىْ شِدَّةٍ فُرٍجَتْ عَنْهُ وَمَنْ تَوَسَّلَ بِىْ اِلَىَ اللهِ فِىْ حَاجَةٍ قُضِيَتْ

অর্থাৎ- যে কেউ দু:খ-দুর্দশায় পতিত হয়ে আমার কাছ থেকে সাহায্য প্রার্থনা করে, তার দু:খ দুর্দশা লাঘব হয়ে যাবে; যে কেউ দৈন্য-দশার টানা পোড়নে পড়ে রাহুগ্রস্থ হবে, সে যদি আমার নাম ধরে আমাকে ডাকে, তাহলে তার দুরবস্থা দূরীভূত হয়ে যাবে; আর যে কেউ আমার মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে স্বীয় উদ্দেশ্য পূরণ করতে চাইবে, তার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবে।

★ হাসান শানতুফী ঃ বাহজাতুল আসরার ঃ ১/১০২ পৃ.

 সেই জায়গায় আরো উলে­খিত আছে : হুযুর গাউছে পাক (রা:) ‘নামাযে গাউছিয়াহ’ পড়ার এ নিয়ম বর্ণনা করেছেন, দু’রাকাত নফল পড়বে, প্রতি রাকআতে ১১ বার ‘সূরা ইখলাস’ পাঠ করবে। সালাম ফিরিয়ে ১১ বার সালাত ও সালাম পাঠ করবে। এরপর বাগদাদের দিকে (উত্তর দিক) বার কদম চলতে থাকবে এবং প্রতি পদে আমার নাম উচ্চারণ পূর্বক স্বীডয় মকছুৃদের কথা ব্যক্ত করবে; আর দু’চরণ বিশিষ্ট এ কবিতার স্তবকটি আবৃত্তি করবে :

اَيُدْرِ كُنِىْ ضَيْمٌُ وَاَنْتَ ذَخِيْرَتِىْ

وَاُظْلَمُ فِى الدُّنْيَا وَاَنْتَ نَصِيْرِىْ

وَعَارٌُ عَلَى حَامِىْ اَلْحَمَى وَهُوَ مُنْجَدِىْ

اِذَا ضَاعَ فِى البَيْدَا عِقَالِ بِعَيْرِىْ

অর্থাৎ- আপনি বিশাল ভান্ডারের মালিক হয়েও কি আমি কি দুর্দশাগ্রস্ত হব? আপনার মত সাহায্যকারী থাকতে আমি কি পৃথিবীতে নিগৃহীত হব? চারণভূমির রক্ষক যদি আমার সাহায্যকারী হয়, তথায় বিচরণকারী আমার উটের রসিও যদি খোয়া যায়, তা’হলে সেই চারণ ক্ষেত্রের রক্ষকের জন্য যে এটি লজ্জার বিষয়, তা’বলাই বাহুল্য। এ নিয়ম বর্ণনা করার পর মোল্লা আলী কারী (রহ:) বলেছেন : এ আমলটি বেশ কয়েকবার পরীক্ষা করে উক্ত বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করা হয়েছে।

দেখুন, হুযুর গাউছে পাক মুসলমানদেরকে শিক্ষা দিচ্ছেন- দুর্দশাগ্রস্থ হলে আমার সাহায্য প্রার্থনা করে। আর হানাীদের বিশিষ্ট নির্ভরযোগ্য আলিম মোল­া আলী কারী (রহ:) উক্ত বক্তব্য খন্ড না করে হুবহু উদ্ধৃত করে বলছেন অভিজ্ঞতার আলোকে এর সত্যতা যাচাই করে দেখা হয়েছে। এ থেকে জানা গেল বুজুর্গদের কাছ থেকে তাঁদের ওফাতের পরেও সাহায্য চাওয়া জায়েয ও ফলপ্রসূ।

এতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ ছাড়া অন্যের সাহায্য ভিক্ষা করার স্বপক্ষে কুরআনী আয়াত, হাদীছ ও খ্যাতনামা ফিকাহবিদ, উলামা ও মাশায়েখের উক্তিসমূহ থেকে প্রমাণাদি উপস্থাপন করেছি। এখন খোদ ভিন্নমতাবলম্বীদের মাননীয় আলিমদের বক্তব্যসমূহ থেকেও প্রমাণাদি উপস্থাপন করছি।

দেওবন্দীদের শায়খুল হিন্দ মওলবী মাহমুদুল হাসান সাহেব স্বীয় তরজুমায়ে কুরআনে’ اَيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ আয়াত এর প্রেক্ষাপটে বলেছেন “হ্যা, যদি কোন প্রিয় বান্দাকে রহমতে ইলাহীর মাধ্যম মনে করে, তাঁকে স্বয়ং সম্পূর্ণ ও সত্ত্বাগতভাবে সাহায্যকারী জ্ঞান না করে তাঁর কাছ থেকে বাহ্যিক সাহায্য ভিক্ষা করা হয়, তাহলে তা বৈধ। কেননা তাঁর কাচে সাহায্য চাওয়া মূলত: আল্লাহ তা’আলার কাছ থেকে সাহায্য প্রার্থনার নামান্তর।”

★ শাব্বির আহমদ উসমানী ঃ তাফসীরে উসমানী ১ম খন্ডঃ ৪ পৃঃ,সুরা ফাতেহা

  এ বক্তব্য যা ফায়সালা করে দিল তা’ই আমাদের প্রতিপাদ্য বিষয়। কোন মুসলমান কোন ওলী বা নবীকে খোদা কিংবা খোদার পুত্র জ্ঞান করে না, কেবল মাধ্যম বলেই বিশ্বাস করে।

‘ফত্ওয়ায়ে রশীদিয়াহ’ গ্রন্থের ১ম খন্ডের ৬৪ পৃষ্ঠায় ‘কিতাবুল খত্রে ওয়াল ইবাহাতে’ শীর্ষক আলোচনায় আলোচ্য বিষয় প্রসঙ্গে একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর লিপিবদ্ধ আছে।

প্রশ্ন : কোন কোন কবিতায় আছে :

يارسول كبر يافريادهے

يامحمد مصطفى فرياد هے

مدد كر بهر خدا حضرت محمد مصطفى

ميرے تم سے هر گهر ى فرياد هے

 (ওহে রাসূলে কিবরিয়া, আপনার কাছে আমার ফরিয়াদ আছে। হে মুহাম্মদ মুস্তফা, আমার ফরিয়াদ আছে। হে হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা, আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে সাহায্য কর“ন। আপনার কাছে প্রতিনিয়ত আছে আমার ফরিয়াদ।) এ ধরনের বিষয়বস্তু সম্বলিত কবিতাসমূহ পাঠ করা প্রসঙ্গে আপনার মত কি?

উত্তর : আল্লাহ তা’আলা তাঁকে (রাসূল) এ বক্তব্য সম্পর্কে অবহিত করবেন এ ধারণা বশবতর্ী হয়ে এককভাবে মনে মনে কিংবা প্রকাশ্যে এ ধরনের শব্দাবলী সম্বলিত কবিতা পাঠ করা বা কোনরূপ ধারণা ব্যতিরেকে কেবল আন্তরিক মহব্বত সহকারে এ ধরনের শব্দাবলী উচ্চারণ করা বৈধ।

উক্ত ফত্ওয়ায়ে রশীদিয়ার ৩য় খন্ডের ৫ পৃষ্ঠায় উলে­খিত আছে: জনৈক ব্যক্তি মওলবী রশীদ আহমদ সাহেবের কাছে এ প্রশ্নটি রেখেছিলেন একটি কবিতায় আছে :

يَا رَسُوْلَ اللهِ اَنْظُرْ حَالَنَا – يَارَسُوْلَ اللهَ اِسْمَعْ قَالَنَا

اِنَّنِىْ فِى بَحرِهَمٍّ مُّغْرَقٌُ – خُذْيَدِىْ سَهِّلْ لَنَا اَشْكَالَنَا

অর্থাৎ- ইয়া রাসূলাল­াহ, আমাদের অবস্থায় দিকে লক্ষ্য কর“ন, ইয়া রাসূলাল­াহ, আমাদের আবেদন শুনুন। আমি দু:শ্চিন্তা, দুর্ভাবনার সমুদ্রে তলিয়ে যাচ্ছি, আমার হাত ধর“ন আমাদের জটিল সমস্যাদি সহজ করে দিন। কিংবা ‘কছীদায়ে বুর্দায় আছে :

يَا اَكْرَمَ الْخَلْقِ مَالِيْ مِنْ اَلُوْ ذُبِهِ

سِوَاكَ عِنْدَحَلُوْلِ الْحَادِثِ الْعَمَمِ

অর্থাৎ- ওহে সৃষ্টিজীবের সর্বাধিক সম্মানিত ও কর“ণাময় সত্ত্বা, ব্যাপক আকারে সংকট ও বিপদাপদ অবতীর্ণ হবার সময় আমার এমন কেউ নেই, যা’র নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে পারি।

এসব চরণগুলো জপ করা বা ‘ওযীফা’ হিসাবে পাঠ করা সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কি? উত্তরে মওলবী রশীদ আহমদ বলেছেন এসব শব্দাবলী গদ্যাকারে বা পদ্যাকারে জপ করা ‘মকরূহ তনযীহী’ কুফর, কিংবা কবীরা গুনাহ নয় (মকরূহ তানযীহী হচ্ছে, যে সব কাজ করা শরীয়তের পছন্দনীয় নয়, কিন্তু করলে পরে কোন শস্তি হবে না।) এ দু’টি ইবারতে হুযুর (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) এর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করাকে কুফর ও শিরক বলে অভিহিত করা হয়নি, খুব বেশী হলে ‘মাকরূহ তানযীহী বলা হয়েছে, যা অনেকটা বৈধতার কাছাকাছি বা বৈধ বললেই চলে।

‘কছায়েদে কাসেমী’তে ভিন্ন মতাবলম্বীদের মহামাননীয় আলেম মওলবী কাসেম সাহেব বলেছেন :

مدد كراىكرم احمدى كه تيرى سوا

نهيں هے قاسم بيكس كاكوئ حامى كار

অর্থাৎ- ওহে কর“ণাময় আহমদ, আমাকে সাহায্য কর“ন। আপনি ছাড়া এ সহায় ও সম্বলহীন কাসেমের আর কোন সাহায্যকারী নেই। 

★কাসেম নানুতবী ঃ কাসীদায়ে কাসেমী ঃ ৫-৭ পৃ.

এখানে লক্ষ্য কর“ন, তিনি হুযুর (আলাইহিস সালাম) এর সাহায্য প্রার্থী হয়েছেন, আরয করেছেন- আপনি ছাড়া আমার আর কোন সহায়ক নেই। অর্থাৎ খোদাকেও ভুলে গেছেন তিনি। উদুর্ ভাষায় অনূদিত ‘সিরাতে মুস্তাকীম’ গ্রন্থের পরিশিষ্টে ৩য় উপকারী বিষয়ের’ বর্ণনায় মওলবী ইসমাইল সাহবে (ভারতে ভিন্নমত প্রচার ও প্রসারের অগ্রদূত) বলেন- “এরূপ উচ্চ মরতবা সম্পন্ন ও উচ্চ পদস্থ বুযুর্গগণ অদৃশ্যসূক্ষ্ম জগত (আলেম মিছাল যেখানে এ জগতের দৃশ্যমান সবকিছু নমুনা আছে) ও দৃশ্যমান জগতে সক্রিয় ভূমিকা পালনের অবাধ এখতিয়ার ও অনুমতি প্রাপ্ত হন।

★ইসমাঈল দেহলভী ঃ সিরাতে মুস্তাকীম ঃ ৬০ পৃ.

ভিন্ন মতাবলম্বী অনেক আলেমের পীর হাজী ইমদাদুল্লাহ সাহেব বলেছেন :

جهاز امت كا حق نے كرديا هے آپكے هاتهوں

تم اب چاهے ڈباؤ ياتراؤ يارسول الله

অর্থাৎ- ইয়া রাসূলাল্লাহ! উম্মতের জাহাজের নিয়ন্ত্রণ ভার আল্লাহ তা’আলা আপনার হাতে তুলে দিয়েছেন। আপনি ইচ্ছা করলে সেটি ডুবিয়ে দিতে পারেন, কিংবা রক্ষাও করতে পারেন। 

★ ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী : কুলি­য়াতে এমদাদিয়া :১৮ পৃঃ

‘ফত্ওয়ায়ে রশীদিয়া’ ১ম খন্ডে ‘কিতাবুল বিদআত’ শীর্ষক আলোচনার ৯৯ পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ আছে, কোন কোন রিওয়ায়াতে যে বলা হয়েছে : হে আল্লাহর বান্দাগণ আমাকে সাহায্য কর“ন, এতে আসলে কোন মৃতব্যক্তির কাছে সাহায্য প্রার্থনা করার কথা বলা হয়নি, বরং যেসব আল্লাহর বান্দা বিজন বনে বিদ্যমান আছেন, তাঁদের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়ার কথাই বলা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা তাঁদেরকে সে সব কাজের জন্যই সেখানে নিযুক্ত করেছেন।

এ ইবারত থেকে বোঝা গেল যে, আল্লাহর কিছুসংখ্যক বান্দা আল্লাহর পক্ষ থেকে বন জঙ্গলে নিয়োজিত থাকেন, যাতে তাঁরা মানুষের সাহায্য ও উপকার করতে পারেন । তাঁদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা বৈধ। এখন বাকী রইল এ কথার ফয়সালা করা নবী করীম (ﷺ) সাহায্য করতে পারেন কিনা? এ প্রসঙ্গে অনেক কিছু উপস্থাপন করেছি এবং সামনে যুক্তি নির্ভর প্রমাণাদির বর্ণনায়ও এর বিশদ আলোচনা করব। মওলবী মাহমুদুল হাসান সাহেব ‘আদিল­ায়ে কামিলাহ’ নামক গ্রন্থের ১৪ পৃষ্ঠায় বলেছেন : ‘আসলে খোদার পরে এ বিশ্বের মালিক হচ্ছেন রাসূল (ﷺ)। জড় পদার্থ হোক বা প্রাণীকূল, মানব জাতি হোক বা অন্য কোন জাতি হোক, মোট কথা সবকিছুর মালিক তিনিই। এ কারণেই তো তাঁর স্ত্রীগণের সহিত সহাবস্থানের ব্যাপারে ন্যায়নুগ আচরণ ও তাঁদের মুহরানা আদায় তাঁর উপর অত্যাবশ্যকীয় বা ওয়াজিব ছিল না।” “সিরাতে মুস্তাকীম” গ্রন্থের ‘২য় হিদায়েত’ এর ‘১ম ইফাদাহ’ এর ৬০ পৃষ্ঠায় মওলবী ইসমাইল সাহেব বলেছেন, হযরত আলী মুরতাযা (রা:) এর ফযীলত হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা:) ও হযরত উমর ফার“ক (রা:) এর তুলনায় এক দিক দিয়ে বেশী প্রমাণিত। ফযীলতের এ আধিক্যের কারণ হচ্ছে, তাঁর অনুসারীদের সংখ্যাধিক্য এবং বেলায়তের স্তরসমূহ এবং কুতবিয়াত, গাউছিয়াত ও আবদালিয়ত এবং এ জাতীয় অন্যবিধ গুর“ত্বপূর্ণ কর্মকান্ড তাঁর সময়কাল থেকে পৃথিবীর সমাপ্তিলগ্ন পর্যন্ত তাঁরই মাধ্যমে সম্পন্ন হয় ও হতে থাকবে। আর রাজা-বাদশাগণের বাদশাহী ও শাসকবর্গের, শাসনেও তাঁর সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে, যা’ ‘আলমে মালাকুত’ বা ফিরিশতা জগতে ভ্রমণকারীদের কাছে গোপন নয়।”

এ ইবারত থেকে পরিষ্কার জানা গেল যে, অন্যান্য লোকগণ বাদশাহী, আমিরী, বেলায়াত ও গাউছিয়ত হযরত আলী (রা:) থেকে লাভ করেন।

দেওবন্দীদের পীর ও মুর্শিদ হাজী ইমদাদুল­াহ সাহেব স্বীয় গ্রন্থ ‘যিয়াউল কুলুব’ এ লিখেছেন :

‘এ স্তরে উপনীত হয়ে বান্দা খোদার প্রতিনিধিরূপে খোদার পথের যাত্রীদের ঐস্তরে পেঁৗছান এবং বাহ্যিকরূপে বান্দা থাকলেও বাতেনী জগতে খোদা হয়ে যান। একেই বলা হয় ‘বরয্খ’। এখানে অপরিহার্যতা ও সম্ভাবনা এক সমান- একটির উপরে অন্যটির প্রাধান্য নেই। এস্তরে পৌছে আরেফ (খোদার পরিচয় প্রাপ্ত) জগত নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী হয়ে যান। (যিয়াউল কুলুব গ্রন্থ, দেওবন্দের রাশেদ কোম্পানীর আশরাফিয়া কুতুবখানা কর্তৃক মুদ্রিত- ২৯ পৃষ্ঠায় ‘মরাতেব কা বয়ান’ শীর্ষক বর্ণনা দেখুন।)

বি: দ্র:- এখানে যে ‘অপরিহার্যতা ও সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে এগুলো সম্পর্কে কিছু ধারণা থাকা প্রয়োজন। আল্লাহকেই বলা হয় ‘ওয়াজিবুল উযুদ’ অর্থাৎ তার অস্তিত্ব’ একান্ত অপরিহার্য। আর আল্লাহ ছাড়া সমগ্র সৃষ্টি জগতকে ‘মুমকিনুল উযুদ’ নামে অভিহিত করা হয় অর্থাৎ এর অস্তিত্ব সম্ভপর, অপরিহার্য নয়। সুতরাং, ‘অপরিহার্য’ ও সম্ভাবনা কথা দু’টি যথাক্রমে খোদার ও মাখলুকের অস্তিত্বের প্রকৃতি নির্ণয় করে।

সুধী পাঠকবৃন্দ, এখন গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন, পীর সাহেব বান্দাকে অভ্যন্তরীণ দিক থেকে খোদা মেনে নিয়েছেন এবং সেই বান্দাকে জগৎ পরিচালনার ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে তৎপর বলে স্বীকার করেছেন।

১৯৬১ ইংরেজী সনের ৯ই জুলাই, রবিবার রাওয়াল পিন্ডির ‘জংগ’ পত্রিকায় একটি খবর প্রকাশিত হয় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ আইয়ুব খান সাহেব আমেরিকা সফরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হচ্ছেন। তখন মৌলানা ইহতেশামুল হক সাহেব দেওবন্দী প্রেসিডেন্টের বাহুতে ‘ইমাম যামেন’ বেঁধে দেন। ১০ই জুলাই, ১৯৬১ সোমবারের ‘জংগ’ পত্রিকায় মৌলানার ছবিও ফলাও করে ছাপানো হয়। ছবিতে তাকে প্রেসিডেন্টের বাহুতে- ‘ইমাম যামেন’ বাঁধতে দেখা যায়। ‘ইমাম যামেন’ কি, হয়ত বুঝতে পারেন নি। ‘ইমাম যামেন’ হচ্ছে ইমাম হোসাইন (রা:) এর নামাঙ্কিত মুদ্রা (র“পিয়া) যা’ ভ্রমণকারীর বাহুতে এ উদ্দেশ্যেই বেঁধে দেওয়া হয় যে, হযরত ইমাম হোসাইন (রা:) তার জিম্মাদার হবেন। অর্থাৎ ইমামের জিম্মাদারীতে ভ্রমণকারীকে অর্পণ করা হয়। ভ্রমণকারী যখন সফর তেকে নিরাপদে ফিরে আসে, তখন ঐ টাকার ফাতিহাখানী করা হয়। হযরত ইমাম হোসাইন (রা:) এর নামে, যাঁর জিম্মাদারীতে এ ভ্রমণকারীকে অর্পণ করা হয়েছিল। এবার দেখুন, এখানে হযরত ইমাম হোসানই (রা:) এর সাহায্যও নেয়া হল; জনাব প্রেসিডেন্টকে তাঁর জিম্মাদারীতে অর্পণ করা হল। সুবহানাল্লাহ!কেমন ঈমান উদ্দীপক কাজ! খোদার শুকরিয়া যে, দেওবন্দীগণও এর সমর্থক হয়ে গেছে।

মওলবী আশরাফ আলী থানবী সাহেব রচিত ‘ইমদাদুল ফত্ওয়া’ নামক গ্রন্থের ৪র্থ খন্ডের ‘কিতাবুল আকায়েদে ওয়াল কালাম’ শীর্ষক আলোচনায় ৯৯ পৃষ্ঠায় লিখা হয়েছে : “খোদা ভিন্ন অপরের থেকে যে সাহায্য সহযোগিতা চাওয়া হয়, তা’ যদি এ বিশ্বাসের বশবতবর্তি  হয়ে চাওয়া হয় যে, যাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা হচ্ছে তিনি স্বয়ং সম্পূর্ণ ও সত্ত্বাগত জ্ঞান ও ক্ষমতার অধিকারী, তাহলে এটি ‘শিরক’। আর যদি তাঁর জ্ঞান ও ক্ষমতা প্রদত্ত বিশ্বাস করে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা হচ্ছে তিনি জীবিত হোক বা ওফাত প্রাপ্ত, তাতে কিছু আসে যায় না। সুতরাং তিনি ফায়সালা করে দিলেন যে, সৃষ্ট জীবকে স্বয়ং সম্পূর্ণ ও সত্ত্বাগত ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে বিশ্বাস না করলে তার কাছ থেকে সাহায্য ভিক্ষা করা জায়েয, যদিও ওফাতপ্রাপ্ত ব্যক্তি থেকে সাহায্য ভিক্ষা করা হয়। আমরাও তাই বলছি।

সে একই মওলবী সাহেব তার রচিত কিতাব ‘নশর“ত তীব’ এর শেষে ‘শমীমুল হাবীব’ নামক কাব্য গ্রন্থের আরবী কবিতার উদুর্ অনুবাদ করেছেন এবং অনূদিত অংশের নামকরণ করেছেন ‘শম্মুত তীব’। সেখানে তিনি বিনা দ্বিধায় হুযুর (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) এর সাহায্য ভিক্ষা করেছেন। সেই আরবী কবিতার চরণগুলিও সাথে সাথে উদুর্তে পদ্যাকারে অনূদিত চরণগুলিও এখানে উলে­খিত হল।

يَا شَفِيْعَ الْعِبَادِ خُذْ بِيَدِىْ – اَنْتَ فِى الْاِضطِرَا رِ مُعْتَمِدِىْ

دستگيرى كيجے ميرى نبى – كشمكش ميں تم هى هو ميرى ولى

لَيْسَ لِىْ مَلْجًا سِوَاكَ اَغِثْ – مَسَّنِىَ اَلضُّرُ سَيِّدِىْ سَنَدِيْ

بجز تمهارے هے كهاں ميرى پناه – فوج كلفت مجه په اغالب هوئ

غَشِّنِى الدَّهْرُ ابنَ عَبْدِ اللهِ – كَنْ مُغِيْثًا فَاَنْتَ لِىْ مَدَدِىْ

ابن عبدالله زمانه هے خلاف – اے مرے مولى خبر ليجے مرے

نام احمد چوں حصينے شد حصين – پس چه باشد ذات آں روح الامين

(نشر الطيب فى ذكر الحبيب-১৮৬)

বঙ্গানুবাদ : নবী হে আমার, আমার হাত ধরে রক্ষা কর“ন। আশা-নিরাশার দোদুল্যমান অবস্থায় যখন কিং কর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়ি, সে সময় আপনিই আমার অভিভাবক ও সাহায্যকারী, আপনার আশ্রয় ছাড়া আমি কার আশ্রয় নিব। আশ্রয় দিন। সংকট, দু:খ-দুর্দশার সৈন্য-সামন্ত আমাকে পরাভূত করে দিয়েছে। ওগো ইবন আবদুল­াহ, কালের বিবর্তন চলছে আমার প্রতিকূলে, হে আমার মওলা, আমার খবর নিন।

★আশরাফ আলী থানীব ঃ নশর“ত্তীব ঃ ১৮৬ পৃ. করাচী থেকে প্রকাশিত

হযরত আহমদ মুস্তাফা (ﷺ) এর পবিত্র নাম যেখানে সুরক্ষিত দূর্গের মত রক্ষাকারী হতে পারে, স্বয়ং সেই পবিত্র সত্ত্বার ক্ষমতা কতটুকু তা’ প্রণিধানযোগ্য।

Comments

Popular posts from this blog

আল্লাহর ওলীগণের কাছ হতে সাহায্য প্রার্থনা প্রসঙ্গে উত্থাপিত আপত্তিসমূহের বিবরণ

আল্লাহর ওলীগণ থেকে সাহায্য প্রার্থনার স্বীকৃতি সূচক যুক্তিসঙ্গত প্রমাণাদি ২য় অধ্যায়